Saturday, July 6, 2013

KAMDUNI: বিচারের নামে প্রহসন, বড় আন্দোলনের পথে যাবে কামদুনি


নিজস্ব প্রতিনিধি


কামদুনি, ৫ই জুলাই— চার্জশিটের নামে সরকারের প্রহসনের বিরুদ্ধে ফের বড় আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে কামদুনি। ইতোমধ্যে গ্রামের ভেতরেই একাধিক প্রতিবাদ কর্মসূচী নিয়েছেন গ্রামবাসীরা। প্রায় প্রতিদিন মিছিল, বিক্ষোভ হচ্ছে। সরকারের অসম্পূর্ণ চার্জশিট ও আদালতে শুনানির দিন পিছিয়ে যাওয়া কামদুনির ক্ষোভের আগুনে যেন ঘি ঢেলেছে। গ্রামবাসীরা আলোচনা করেছেন, এবার আর শুধু গ্রামের ভেতরেই নয় প্রয়োজনে কলকাতাতে গিয়েই তাদের ক্ষোভ, দাবির কথা জানাবে কামদুনি।

শুক্রবারও কামদুনিতে ছিল ক্ষোভের উত্তাপ। এদিনও কামদুনির সেই নিহত ছাত্রীর ভাই প্রসেনজিৎ ঘোষ বলেছেন, আমরা আর সি আই ডি’র ওপর ভরসা রাখছি না। সি বি আই চাই, একমাত্র সি বি আই তদন্ত করলেই গ্রামবাসীরা সাক্ষী দেবে। এমনকি এদিন কামদুনি গ্রামের বাসিন্দারা রীতিমতো ক্ষোভের সঙ্গেই অভিযোগ তুলেছেন, সরকার চার্জশিটে আনসারকে বাঁচানোর চেষ্টা করছে।

এই পরিস্থিতিতেই শুক্রবার আইনজীবীদের সমাবেশ ভরসা যোগালো কামদুনির বাসিন্দাদের। বনগাঁ, বসিরহাট, বারাকপুর, বিধাননগর, বারাসত— উত্তর ২৪ পরগনার বিভিন্ন ব্লক থেকেই এদিন মহকুমা ও জেলা আদালতের আইনজীবীরা এসেছিলেন কামদুনি গ্রামে। ন্যায় বিচারের দাবিতে কামদুনির বাসিন্দাদের লড়াইয়ে সর্বতোভাবে পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন তাঁরা। প্রায় চারশোজন আইনজীবীদের এই সমাবেশে যোগ দিয়েছিলেন কলকাতা হাইকোর্টেরও বিশিষ্ট আইনজীবীরা। কামদুনি স্কুল মাঠে সমবেত হওয়া গ্রামবাসীদের সঙ্গে কথা বলেন তাঁরা। এখানে বক্তব্য রাখেন ভারতী মুৎসুদ্দি, নিশীথরঞ্জন অধিকারী, মিহির দাস। তার আগে কামদুনির ঘোষ পাড়ায় সেই নিহত ছাত্রীর বাড়িতে গিয়ে তাঁর বাবা-মা ও ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলেন নিশীথ অধিকারী, ভারতী মুৎসুদ্দি, মনোজ কান্তি দে সহ আইনজীবীদের একটি দল। নিহত ছাত্রীর শোকাহত বাবা আইনজীবীদের সামনেই আক্ষেপ করেন এভাবে মেয়ের মৃত্যুর বিচার নিয়ে সরকারের ছেলেখেলা করার ঘটনায়। দাবি তোলেন সি বি আই তদন্তেরও।আইনজীবীরা কথা বলেন টুম্পা কয়াল, মৌসুমী কয়ালসহ গ্রামের মহিলাদের সঙ্গেও। তদন্ত নিয়ে তাঁদের ক্ষোভের কথা জানান আইনজীবীদের।

কামদুনি এখন কার্যত পুলিসী ঘেরাটোপে। কামদুনির বাসিন্দাদেরও পুলিস চৌকিতে নাম, ঠিকানা, পরিচয় পত্র দেখিয়েই গ্রামে ঢুকতে কিংবা বেরোতে হয়। সেই অবরুদ্ধ কামদুনিই এখন সরাসরি রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় মূল অভিযুক্তকে বাঁচানোর অভিযোগ তুলছে। 

কে এই আনসার? পুরো নাম আনসার আলি মোল্লা। কীর্তিপুর-২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের মাটিয়াগাছা গ্রামের বাসিন্দা। গ্রামের পরিচিত তৃণমূল মুখ। ভেড়ি এলাকায় তৃণমূলের নির্মম দখলদারি ধরে রাখতে গ্রেপ্তার হওয়ার আগে পর্যন্ত আনসার ছিল তৃণমূল নেতা মতিয়ার সাঁপুইয়ের অব্যর্থ বাজি। আনসারির আরেক পরিচয়ও আকর্ষণীয়। গায়ের জোরে কীর্তিপুর-২নম্বর গ্রাম দখল করার পরে তৃণমূলী প্রধান হন সইদা বিবি। সইদা বিবির স্বামী আসরফ আলি বারাসতের ‘আরাবুল’ মতিয়ার সাঁপুইয়ের ডান হাত। এই সইদা বিবি ও আসরফ আলির আত্মীয় আনসার। জোর করে পঞ্চায়েত দখল করে আসরফ আলির হাতে তুলে দেওয়ার অন্যতম পাণ্ডা এই আনসার আলি মোল্লা। কামদুনির বাসিন্দাদের অভিযোগ, ক্ষমতাধর এই আনসারকে বাঁচাতেই এখন মরিয়া হয়ে উঠেছে শাসক দল তৃণমূল। 

যে পঞ্চায়েত নির্বাচনের উত্তাপ এখন ছড়িয়ে রয়েছে গোটা রাজ্যে, সেই উত্তাপ থেকে কামদুনিকে বঞ্চিত করার পাণ্ডাও এই আনসার। কিছুদিন আগে পঞ্চায়েতের মনোনয়ন পর্ব শুরু হওয়ার আগেই এই আনসারের বাহিনী প্রকাশ্যে সশস্ত্র অবস্থায় দাপিয়ে বেড়িয়েছিল গোটা কামদুনি। সেই স্মৃতি এখনও ফিকে হয়নি কামদুনি ঘোষ পাড়া কিংবা নস্কর, কয়াল পাড়ায়। আনসারের প্রবল সশস্ত্র দাপটেই এই পঞ্চায়েতের ১১টি আসনে বিরোধীরা প্রার্থীই দিতে পারেনি। একটি আসনে দিতে পারলেও সি পি আই(এম)র সেই প্রার্থী এখনও ঘরছাড়া। এদিন কামদুনির স্কুল মাঠের সামনে রাস্তায় দাঁড়িয়ে ঘোষপাড়ার এক যুবক বলছিলেন, ‘আনসাররা গোটা পঞ্চায়েত তৃণমূলকে জিতিয়ে দিয়েছে, আর তাই তৃণমূল এখন তাকে হয়তো বাঁচানোর চেষ্টা করছে’।

কিন্তু কেন এই অভিযোগ? কামদুনির বাসিন্দাদের কথায়, সি আই ডি যে চার্জশিট দিয়েছে তাতে বলা হয়েছে একজন ব্যক্তিই অর্থাৎ সইফুল আলি নাকি দু-দুবার ধর্ষণ করেছে কলেজ পড়ুয়া ওই কিশোরীকে। এমনকি খুনও করে সইফুল। বাকি কাজে সাহায্য করে অন্যান্য অভিযুক্তরা। দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগকে লঘু করে দিতেই সি আই ডি এইভাবে চার্জশিট তৈরি করেছে বলে ইতোমধ্যেই অভিযোগ করেছে মৃতার ভাই। সাংবাদিকদের সামনেই প্রসেনজিৎ বলেছে, গ্রামের অনেকেই সেদিন ঐ পাঁচিল ঘেরা জায়গা থেকে আনসারকে বের হতে দেখেছিল। পরে তাকে জিজ্ঞাসা করেই তো আমরা বাকি তিনজনের নাম জানতে পেরেছিলাম। সেই নাম জানার পরেই আমরা থানায় এফ আই আর করেছিলাম। কিন্তু কামদুনির ওই কলেজ ছাত্রীর ভাইয়ের করা এফ আই আর-এ যাদের নাম রয়েছে তাদের মধ্যে মাত্র একজনের নাম রয়েছে সি আই ডি’র চার্জশিটে।

আর এই ঘটনাই নতুন করে ফের ক্ষুব্ধ করেছে কামদুনিকে। প্রকৃত বিচারের দাবিতে এবার বড় ধরনের আন্দোলনের পথে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে কামদুনি।

- See more at: http://ganashakti.com/bengali/news_details.php?newsid=43272#sthash.9ysDftv3.dpuf

No comments:

Post a Comment