পুলিসকে নিরপেক্ষ হতে নির্দেশ কমিশনের নিয়মের ফাঁকে অর্ধেক বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকবে না
নিজস্ব প্রতিনিধি
কলকাতা, ৫ই জুলাই — গোটা রাজ্যে প্রায় অর্ধেক বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকার সম্ভাবনা প্রায় নেই বললেই চলে। ১৭টি জেলায় ৫৭,২৩৩টি বুথের মধ্যে ২৭,৪৭৩টি এমন বুথ রয়েছে যেগুলি একটি বাড়ি বা চত্বরে একটাই বুথ। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র দপ্তরের যা বিধি রয়েছে তাতে ভোটের কাজে কোথাও কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করতে হলে অর্ধেক সেকশনের কমে করা যাবে না। এক সেকশন বাহিনী বলতে ৭জন জওয়ান বোঝায়। অর্থাৎ বুথে কোথাও কেন্দ্রীয় বাহিনী রাখতে গেলে ৩ থেকে ৪ জন জওয়ানকে রাখতেই হবে সেই চত্বরে। যার অর্থ দাঁড়ায় রাজ্যে প্রায় অর্ধেক বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করাই যাচ্ছে না। এই অর্ধেক বুথে ভোটের পুরো দায়িত্বই থাকবে রাজ্য পুলিসের। শুক্রবার রাতে কমিশনের সচিব তাপস রায় বলেন, বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স হলো কেন্দ্রীয় বাহিনীর নোডাল এজেন্সি। এছাড়াও রেল সুরক্ষা বাহিনী, সীমা সুরক্ষা বাহিনী, সি আই এস এফ থেকে ফোর্স আসছে। ইতোমধ্যেই কমিশনের দপ্তরে বি এস এফ-এর আই জি এ কে শর্মার সঙ্গে রাজ্য নির্বাচন কমিশনার মীরা পাণ্ডের আলোচনা হয়েছে। কেন্দ্রীয় বাহিনী তাঁদের নিয়ম কানুনের বাইরে কাজ করবে না। ফলে রাজ্যের প্রায় অর্ধেক বুথে যে কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকছে না তা এদিন স্বীকার করে নেয় কমিশন। ১১ তারিখ প্রথম দফায় জঙ্গল মহলের তিন জেলা বাঁকুড়া, পুরুলিয়া এবং পশ্চিম মেদিনীপুরে ভোট গ্রহণ। প্রথম দফায় তিন জেলায় মোট বুথের সংখ্যা ১০,০৩৮টি। কেন্দ্রীয় বিধি নিষেধের বেড়াজালে এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে যে তারমধ্যে ৭৩৪২টি বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের সম্ভাবনা প্রায় নেই। এইরকম বুথ বাঁকুড়াতে রয়েছে ২১০৬টি, পুরুলিয়াতে ১৫৭৬টি এবং পশ্চিম মেদিনীপুরে আছে ৩৬৬০টি। প্রথম দফায় ১৫ হাজার থাকছে কেন্দ্রীয় বাহিনী আর রাজ্যের সশস্ত্র পুলিস ৩৫ হাজার। কমিশনের বক্তব্য অনুযায়ী প্রথম দফায় তিন জেলায় দুই তৃতীয়াংশেরও বেশি বুথে নিরাপত্তার দায়িত্বে রাজ্য পুলিসই থাকছে।
এদিকে শনিবার সকাল সাড়ে ১১টায় সর্বদলীয় বৈঠক ডেকেছেন নির্বাচন কমিশনার মীরা পাণ্ডে। এই বৈঠকে ভোটের সময় সকাল ৭টা থেকে বিকেল ৫টার পরিবর্তে এক ঘণ্টা এগিয়ে এনে সকাল ৬টা থেকে বিকেল ৪টে পর্যন্ত করার প্রসঙ্গটি ফের একবার তুলতে পারে বাম দলগুলি। রাজ্য বামফ্রন্টের পক্ষে ইতোমধ্যেই কমিশনের কাছে এই দাবি করা হয়েছে। ভরা বর্ষা এবং রমজান মাসের দিকে তাকিয়ে ভোট গ্রহণের সময় এক ঘণ্টা এগিয়ে আনলে সকলেরই সুবিধা হবে বলে মনে করে বামফ্রন্ট। এদিন কমিশনের দপ্তরে প্রথম, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় দফার ৯টি জেলার জেলাশাসক এবং পুলিস সুপারদের সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠক হয় কমিশন কর্তাদের। আলোচনার মূল বিষয় ছিল প্রচার পর্ব থেকে ভোট গ্রহণ এবং গণনা কেন্দ্রের নিরাপত্তা। এছাড়া আলোচনা হয়েছে ভোটের প্রস্তুতি এবং অতি বৃষ্টি ও বর্ষায় যাবতীয় ব্যবস্থাপনা নিয়ে। বৈঠকে নির্বাচন কমিশনার মীরা পাণ্ডে জেলা পুলিস সুপারদের বিশেষভাবে সতর্ক করেছেন আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে। নির্বাচন কমিশনার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে যে খবর আসছে পুলিস রিপোর্টে তার কোন উল্লেখ থাকছে না। অথচ কমিশন অন্যান্য সূত্রে খোঁজ খবর নিয়ে দেখছে সংশ্লিষ্ট ঘটনাটি ঘটেছিল। ফলে নিরপেক্ষ ভাবে এসব প্রশ্নে পুলিস সুপারদের আরো সতর্ক হয়ে চলার কথা বলেন মীরা পাণ্ডে। এদিন বৈঠকে ঠিক হয়েছে অতি দ্রুত সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা এবং ভোটারদের মধ্যে ভয়ভীতি কাটানোর যাবতীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে প্রশাসন। এ বিষয়ে জেলাশাসক, জেলা পুলিস সুপার এবং জেলা পর্যবেক্ষক এই তিনজন মিলে এরিয়া ডমিনেশনের পরিকল্পনা করবেন। ৮ই জুলাই প্রথম দফায় তিন জেলায় ১৫ হাজার কেন্দ্রীয় বাহিনী এবং ৩৫ হাজার রাজ্যের সশস্ত্র পুলিস পৌঁছে যাবে। তিন জেলায় এই ৫০ হাজার বাহিনীকে কীভাবে ব্যবহার করা হবে তা পর্যবেক্ষকের সঙ্গে আলোচনা করে জেলা প্রশাসন ঠিক করবে। প্রথম দফায় ১০,০৩৮টি বুথের মধ্যে অতি স্পর্শকাতর বুথের সংখ্যা ৭ হাজারের কিছু বেশি।
- See more at: http://ganashakti.com/bengali/news_details.php?newsid=43258#sthash.fYCxSFSr.dpuf
No comments:
Post a Comment