Saturday, July 6, 2013

NREGA IN WEST BENGAL: রেগায় ব্যর্থতায় সামনের সারিতে পশ্চিমবঙ্গ মুখ্যমন্ত্রীর দাবি নস্যাৎ কেন্দ্রের রিপোর্টে

রেগায় ব্যর্থতায় সামনের সারিতে পশ্চিমবঙ্গ 
মুখ্যমন্ত্রীর দাবি নস্যাৎ কেন্দ্রের রিপোর্টে

নিজস্ব প্রতিনিধি

কলকাতা, ৫ই জুলাই— বিভিন্ন রাজ্যে গ্রামবাসীদের কত অংশ একশো দিনের কাজের প্রকল্পে একশো দিনই কাজ পেয়েছেন? খতিয়ে দেখেছিল কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়নমন্ত্রক। সমীক্ষার রিপোর্ট জানাচ্ছে, পশ্চিমবঙ্গ সেই তালিকায় পঁচিশ নম্বরে জায়গা পেয়েছে। এখানে মমতা ব্যানার্জির মুখ্যমন্ত্রিত্ব, ২০১২-১৩ আর্থিক বছরে মাত্র ৪ শতাংশ মানুষ রেগায় একশো দিন কাজ পেয়েছেন। 

দেশে ২৮টি রাজ্য। একশো দিনে একশো দিনই কাজ পাওয়া পরিবারের সংখ্যার হিসাবে পশ্চিমবঙ্গ রয়েছে বাইশ নম্বরে। রাজ্যের পিছনে শুধু অরুণাচল প্রদেশ, আসাম, গোয়া, মণিপুর, পাঞ্জাব আর উত্তর প্রদেশ। 

সেই রিপোর্ট পৌঁছেছে রাজ্যের গ্রামোন্নয়ন দপ্তরেও। সেই রিপোর্ট জানাচ্ছে, একশো দিনের কাজের প্রকল্পে এই ২৮টি রাজ্যের কাজের হাল খতিয়ে দেখতে জুনের মাঝামাঝি রাজ্যগুলির গ্রামোন্নয়ন সচিবদের সঙ্গে নয়াদিল্লিতে বৈঠকে বসেছিল কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়নমন্ত্রক। পশ্চিমবঙ্গে রেগার কাজ নিয়ে গত কয়েক মাসে একাধিক সভায় নিজের সরকারের বিরাট সাফল্য দাবি করেছেন তৃণমূল নেত্রী। কিন্তু তাঁর সরকারের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে যে রিপোর্ট জয়রাম রমেশের মন্ত্রক তৈরি করেছে, তাতে মুখ্যমন্ত্রীর দাবি নস্যাৎ হয়ে গেছে।

স্বাভাবিকভাবেই পনেরো দিনের কম কাজ পেয়েছেন গ্রামবাসীদের কত অংশ, তারও একটি তালিকা বানিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। অর্থাৎ এটি এক অর্থে ফেল করা পড়ুয়াদের বা একশো দিনের কাজের প্রকল্পে ব্যর্থতার তালিকা। সেখানে আবার পশ্চিমবঙ্গ সামনের সারিতে। দেশের আঠাশটি রাজ্যের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ রয়েছে ছয় নম্বরে। এই ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গের আগে আছে পাঁচটি রাজ্য। সেগুলি হলো, অরুণাচল প্রদেশ, আসাম, গোয়া, পাঞ্জাব, উত্তর প্রদেশ। পশ্চিমবঙ্গে যে গ্রামবাসীরা এই প্রকল্পে কিছু না কিছু কাজ পেয়েছেন, তাঁদের ৩০ শতাংশ পনেরো দিনেরও কম কাজ পেয়েছেন রেগায়। 

রাজ্যের বর্তমান রাজনৈতিক বিন্যাসের নিরিখে উল্লেখযোগ্য দু’টি জেলা হলো দক্ষিণ ২৪ পরগনা এবং পূর্ব মেদিনীপুর। এই দু’টি জেলায় গত পাঁচ বছর জেলা পরিষদ পরিচালনা করছে রাজ্যের বর্তমান শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস। এই দু’টি জেলার ক্ষেত্রে জেলা পরিষদের কাজে জেলাশাসক বা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ অনেকটাই কম। অথচ রেগায় এই জেলা দু’টির ভূমিকা মোটেই সন্তোষজনক নয়। ২০১২-১৩ আর্থিক বছরে দক্ষিণ ২৪ পরগনায় রেগায় কাজ পেয়েছে ২ লক্ষ ৪৮ হাজার ৯৫৭টি পরিবার। তাদের মধ্যে ৫৭ হাজার ২৮৯টি পরিবার কাজ পেয়েছে ১৫ দিনের কম। অর্থাৎ মোট কাজ পাওয়া পরিবারের ২৩ শতাংশেরও বেশি কাজ পেয়েছে ১৫ দিনের কম। পূর্ব মেদিনীপুরে ১৫ দিনের কম কাজ পাওয়া পরিবার প্রায় ২৫ শতাংশ। এই জেলায় রেগায় কাজ পেয়েছে ৪ লক্ষ ১৭ হাজার ৩০৫টি পরিবার। তারমধ্যে ১৫ দিনের কম কাজ পাওয়া পরিবার ১ লক্ষ ১ হাজার ১৫৬টি। 

একশো দিনের কাজের প্রকল্পে গুরুত্বপূর্ণ হলো গড় কাজের দিন। অর্থাৎ গ্রামবাসীদের গড়ে কতদিন করে কাজ দেওয়া গেলো। পশ্চিমবঙ্গে ২০১২-১৩ আর্থিক বছরে গ্রামবাসীরা গড়ে কাজ পেয়েছেন ৩৪.৬৩ দিন। এই ক্ষেত্রে জাতীয় গড় প্রায় ৪৬ দিন। গড় কাজের দিনের নিরিখে দেশের আঠাশটি রাজ্যের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ রয়েছে ২৩ নম্বরে। পশ্চিমবঙ্গের পিছনে রয়েছে অরুণাচল প্রদেশ (২৬.৬১ দিন), আসাম (২৫.৪৭ দিন), গোয়া (১৩.১৩দিন), পাঞ্জাব (২৭.২৭ দিন) এবং উত্তর প্রদেশ (২৮.৪৬ দিন)। দেশে গড়ের কাজের দিনে শীর্ষে রয়েছে মিজোরাম (৮৭.৮১দিন) এবং দ্বিতীয় স্থানে ত্রিপুরা (৮৬.৯২ দিন)।

রাজ্যের এই ব্যর্থতা অবশ্য মানতে চাননি গ্রামোন্নয়নমন্ত্রী সুব্রত মুখার্জি। শনিবার তিনি শুরু করছেন পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রচার। প্রথমেই যাচ্ছেন বাঁকুড়ায়। শুক্রবার মহাকরণ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার আগে বললেন, ‘‘আমরা অনেকটাই উন্নতি করেছি। মুখ্যমন্ত্রী অনেকবার বলেছেন। আমিও বলি, মনে রাখবেন, আমরা যত শ্রমদিবস সৃষ্টি করবো বলেছিলাম, তার থেকে বেশি করেছি। লক্ষমাত্রার ১১০ শতাংশ অগ্রগতি আমাদের। প্রথমবার। দেশেও প্রথম।’’

না, বাস্তবে কোনোটিই নয়। বছরের গোড়ায় কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে রাজ্যগুলি ঠিক করে, সেই বছর কত শ্রমদিবস তৈরি করা হবে। কাজের চাহিদার পরিমাপ করেই তা ঠিক হয়। পশ্চিমবঙ্গে ২০১২-১৩ আর্থিক বছরে শ্রমদিবস তৈরির লক্ষমাত্রা ঠিক হয়েছিল ১৮৩৩ লক্ষের বেশি। শ্রমদিবস তৈরি হয়েছে তার বেশি, প্রায় ১১০ শতাংশ, সন্দেহ নেই। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে এটি প্রথম নয়। ২০০৮-০৯ আর্থিক বছরে শ্রমদিবস তৈরি হয়েছিল লক্ষমাত্রার ৩০০ শতাংশ বা তিনগুণের বেশি। দ্বিতীয়ত, ২০১২-১৩ আর্থিক বছরে কেরালা, তামিলনাডু, অরুণাচল প্রদেশ, হরিয়ানা লক্ষমাত্রার একশো ভাগের বেশি শ্রমদিবস সৃষ্টি করেছে। অরুণাচলে আবার বৃদ্ধির হার প্রায় ৫৪৮ শতাংশ। 

শ্রমদিবসের কত অংশের অধিকারী মহিলারা? তাও‍‌ খতিয়ে দেখেছে কেন্দ্রীয় সরকার। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মহিলা। আশা করা গিয়েছিল, এক্ষেত্রে ফল ভালো হবে। কিন্তু হয়নি। মণিপুরের সঙ্গে যৌথভাবে দেশের আঠাশটি রাজ্যের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের স্থান হয়েছে ১৯ নম্বরে। এই ক্ষেত্রে শীর্ষে রয়েছে কেরালা। সেখানে ৯৩ শতাংশ শ্রমদিবসই মহিলারা তৈরি করেছেন। এই রাজ্যে মোট শ্রমদিবসের ৩৪ শতাংশ মহিলারা তৈরি করেছেন।

- See more at: http://ganashakti.com/bengali/news_details.php?newsid=43273#sthash.HCKBOm1b.dpuf

No comments:

Post a Comment